admin প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ২২, ২০২৫, ২:৩৮ পূর্বাহ্ন /

ভারতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ করছে বিএনপি

ড. মোঃ কামরুজ্জামান
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স ছয় দশক পূর্ণ হতে যাচ্ছে। এ দীর্ঘ সময় ধরে ১৬ জন রাষ্ট্রপতি দেশের সর্বোচ্চ আসন অলঙ্কৃত করেছেন। এ ১৬ জনের মধ্যে বাংলাদেশকে অধিক সময় ধরে শাসন করেছেন মূলত তিন জন। প্রথমজন ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত এবং ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান। তিনি ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ থেকে ৩০ মে ১৯৮১ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ছিলেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তিনি ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ থেকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাঁর শাসনামলকে স্বৈরাচারী আমল বলা হয়ে থাকে। বিএনপি, আওয়ামীলীগ ও জামায়াতে ইসলামী এ স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করে। আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটে। এরশাদের পতনের পর দেশে প্রথম গনতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করে। এ প্রক্রিয়ায় ১৯৯১ এর নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হয় বিএনপি। বিএনপিকে ক্ষমতায় যেতে সহায়তা করে জামায়াতে ইসলামী। ১৯৯৬ সালে গনতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালে নতুন করে আবার ক্ষমতায় আসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। এ সংসদীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী আসন পায় ১৮টি। জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও সেক্রেটারি জেনারেল তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। তিনটি মন্ত্রণালয়ই অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সাথে পরিচালিত হয়। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকলেও মন্ত্রণালয় বিষয়ক কোনো ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ এখনও পর্যন্ত কেউ উত্থাপন করেনি।
মোটা দাগে বলতে গেলে বাংলাদেশকে শাসন করেছে মূলত তিনটি দল। সে তিনটি দল হলো আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের গোটা শাসনামলের সময়সীমা ২৬ বছরের মতো। বিএনপির শাসনামলের সময়সীমা ছিল ১৫ বছর। এরশাদের জাতীয় পার্টির শাসনকাল ছিল ছয় বছর। তবে বিগত সাড়ে ১৫ বছর যাবত জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সহযোগী শক্তি হিসেবে ক্ষমতার অংশীদার ছিল। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির সাথে ক্ষমতার অংশীদার ছিল।

যেকোনো দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি সেদেশের একটি স্বাভাবিক রুটিন ওয়ার্ক। ক্ষমতায় একজন আসবে আরেকজন যাবে কিন্তু উন্নয়ন থেমে থাকবেনা। কারণ উন্নয়ন ও অগ্রগতি সংশ্লিষ্ট দেশের একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। দল ও শাসকের পরিবর্তনে তাই উন্নয়নের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। তাই গত ৫৪ বছরে দেশে যে উন্নতি হয়েছে তাতে সকল শাসকের কমবেশি অবদান আছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সময়ে উন্নয়নের ব্যাপক ডামাডোল পেটানো হয়েছে। উন্নয়ন কিছু হয়েছেও। তবে উন্নয়নের চেয়ে দেশের ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। উন্নয়নের নামে দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে। উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনা নানা মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। এসব প্রকল্প থেকে হাসিনা হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। পাচারকৃত টাকা দিয়ে বিদেশে আওয়ামী লীগের নেতারা বেগম পাড়া তৈরি করেছে। হাসিনার পলায়নের পর শেখ পরিবারের দুর্নীতির খতিয়ান উন্মোচিত হয়েছে।

ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনা ছিল ভয়ংকর প্রতিশোধ পরায়ণ। তার অন্তরটি ছিল লোভ এবং হিংস্রতায় ভরা। তিনি ছিলেন অজপাড়াগায়ের অশিক্ষিত মানুষের মত এক ঝগড়াটে মহিলা। ক্ষমতার নেশা তাকে পাগল করে তুলেছিল। তাঁর পাগলামির কারণে আদালত কর্তৃক একসময় তিনি ‘রং হেডেড’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। গদিতে টিকে থাকার জন্য তার একমাত্র ভরসা ছিল ভারত। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তার কোনো মমতা ও আস্থা ছিল না। আওয়ামী লীগের গোটা শাসনামলে বাংলাদেশ ভারতের করদরাজ্যে পরিণত হয়েছিল। ভারতের আধিপত্যবাদ আর আওয়ামী নির্যাতন চরম সীমায় পৌছে গিয়েছিল। ফলে জনগন এই দুই শক্তির উপর তিক্ত ও বিরক্ত উঠেছিল।কিন্তু হাসিনার অত্যাচারের ভয়ে দেশবাসী সেটা প্রকাশ করতে পারতো না। বোবাকান্না ছিল তাদের কষ্ট প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম।
শেখ হাসিনা ছিল চরম এক হিংসুটে মহিলা। দেশের কাউকে সে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করতো না। দেশটিকে সে নিজের পৈত্রিক ভিটেমাটি মনে করতো। তার দলকে সে একটি অঘোষিত ধর্মে পরিণত করেছিল। তার বাবাকে পয়গম্বরে পরিণত করেছিল! মুক্তিযুদ্ধকে পরিণত করেছিল ওহীতে! মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বাণীই ছিল চূড়ান্ত! এ ব্যাপারে তাদের গেলানো বাণী ছাড়া অন্য কিছু লিখলে বা বললে তাকে রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী ও জঙ্গি বলে আখ্যায়িত করা হতো। রাষ্ট্রদ্রোহী তকমা দিয়ে তাকে আয়না ঘরে পাঠিয়ে দিতো। বলা বাহুল্য, মুক্তিযুদ্ধকে তারা একটা বিজনেস বানিয়ে ফেলেছিল। ৭১ ছিল তাদের একমাত্র পুঁজি। এ পুঁজিকে তারা একটি ট্যাবলেট আকারে বাজারে ছেড়ে দিয়েছিল। বিএনপি- জামায়াতের অনেক নেতা কর্মী জীবন বাঁচাতে এই ট্যাবলেটের দ্বারস্থ হয়ে পড়েছিল।

৫ আগষ্ট অবশেষে ছাত্র জনতার প্রবল আন্দোলনে হাসিনার বিদায় হলো। তাঁর বিজনেসের ফ্যাক্টরি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়লো। ফ্যাক্টরির ম্যানেজার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে কোনোরকম জীবন রক্ষা করলো। ফ্যাক্টরির আওয়ামী কর্মচারিরাও আত্মরক্ষার্থে ভারতে পাড়ি জমালো। গোটা জাতি ট্যাবলেটের আসক্তি থেকে মুক্তি পেলো। বাঙালি জাতির মুখে আল্লাহর প্রশংসা উচ্চারিত হলো। লাখো জনতা আল্লাহর দরবারে সিজদাবনত হলো। নতুন করে বাংলাদেশের পথ চলা শুরু হলো। নতুন ও পুরাতনের মিশ্রণে নতুন এক দিগন্তের উন্মোচন হলো বাংলাদেশে। ছাত্র জনতা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাঁধে বাংলাদেশের দায়িত্ব তুলে দিলো। তিনি রাষ্ট্রীয় সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগের ঘোষণা দিলেন। দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও বিপ্লবী ছাত্র জনতা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালো।

ওদিকে ভারত তাদের বিশ্বস্ত অনুচর হাসিনাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে ষড়যন্ত্র ও কুটকৌশল অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি নতুন অনুচর হিসেবে বিএনপিকে কাছে টেনে নিয়েছে। বিএনপিও এ পাঁচ মাসের মধ্যে ভারতের পকেটস্থ হয়ে পড়েছে। বিএনপির মাধ্যমে ভারত তাদের পুরনো প্রজেক্ট বাংলাদেশে মার্কেটিং করেছে। আওয়ামী লীগের মতো করেই বিএনপি ১৯৭১ এর ট্যাবলেট গিলে ফেলেছে। রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী ও রগ কাটা ইত্যাদি হলো ভারতীয় প্রজেক্ট। যা বিএনপি নেতারা নির্লজ্জভাবে মুখে আওড়াচ্ছে! এতে দেশের সর্বনাশ হতে চলেছে। পুরাতন বিভক্তি নতুনরুপে দানা বেঁধে উঠেছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্কারের কিছুই সম্পন্ন হয়নি। ভারতপন্থী ও শাহবাগী আমলা ও বুদ্ধিজীবীরা ছাত্র জনতার বিপ্লবকে ব্যর্থ করতে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারা জাতীয় নির্বাচন চাচ্ছে কিন্তু স্থানীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিরোধিতা করছে।

বিএনপি মূলত রাজনীতির মাঠে ভারতীয় প্রজেক্টের বাস্তবায়ন চাইছে। ভারতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বিএনপি মুক্তিযুদ্ধকে সামনে নিয়ে হাজির হয়েছে। যে ছাত্র জনতা বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে বিএনপি এখন প্রকাশ্যে তাদের বিরোধিতা শুরু করছে। বিএনপির ন্যায় চরম নির্যাতিত তাদের পুরনো বন্ধু জামায়াতে ইসলামীকে আওয়ামী লীগের ন্যায় তুচ্ছ তাচ্ছিল্য শুরু করেছে। প্রখ্যাত ও জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীকে বিএনপি নেতারা অত্যন্ত অভদ্রোচিতভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে বক্তব্য দিচ্ছেন!

ক্ষমতার নেশায় বেসামাল বিএনপি বর্তমানে ইউনুস সরকারের বিদায় চাইছে। অথচ ছাত্র জনতার আন্দোলন নির্বাচনের জন্য ছিল না। ছাত্র জনতা চেয়েছে একটি নতুন বাংলাদেশ। চেয়েছে সংস্কার এবং পরিবর্তন। এ সংস্কার ও পরিবর্তনের মাঝে অবশ্য নির্বাচনও আছে। রাজনীতিবিদদের বোঝা উচিত, বাংলাদেশের সকল বৈষম্য দূর করতেই দুই হাজার কিশোর শহীদ হয়েছেন। হাজার হাজার তরুণ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। বিএনপি নেতারা কিশোরদের এ ত্যাগ কুরবানীকে অসম্মান করে চলেছেন। বিএনপি এখন মেয়াদোত্তীর্ণ ট্যাবলেট নিয়ে রাজপথে নেমেছে। অথচ বাংলার জনগণ ও ছাত্র জনতা এখন আর এই ট্যাবলেট খায় না। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক নেতা। তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। শহীদ জিয়ার শাহাদাত আর খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সুযোগে বিএনপি আজ ডুবতে বসেছে। মির্জা ফখরুল আর আমীর খসরু মাহমুদগঙরা আগে থেকেই ভারতের অনুচর ছিল। নতুন করে এই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী ও শামসুজ্জামান দুদুরা। শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া আর তারেক জিয়ার বিএনপিকে আজকে চিনতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। বর্তমান বিএনপি শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শকে লালন করেনা। যে খালেদা জিয়া ভারত প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীন, যার রক্তের গ্রুপ হলো এন্টি ইন্ডিয়া-সেই নেত্রীর বিএনপি এখন ভারতের পকেটস্থ হয়ে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া!

এসব নেতারা ক্ষমতার মোহে বিএনপিকে সর্বনাশ করতে বসেছে। এত বড় একটা দলের ছাত্র সংগঠন মধ্যবয়স্ক বুড়োদের দিয়ে কমিটি গঠন করেছে। তারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতিবাচক রাজনীতি শুরু করেছে। তাদের বিরুদ্ধে টেম্পু স্ট্যান্ড, বাস স্ট্যান্ড আর নৌ স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে প্রশাসনে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের সাথে বিএনপিপন্থী আমলারা হাত মিলিয়েছে। সরকারকে ব্যর্থ করতে তারা বেপরোয়া নীতি অবলম্বন করেছে। বস্তুত চাঁদাবাজি এবং ফ্যাসিবাদের ভিন্ন কোনো আদর্শ নেই। তারা আদর্শিকভাবে এক, চেতনাগতভাবে এক এবং একে অপরের পরিপূরক।
এমতাবস্থায় দেশবাসী মনে করে, এভাবে চাঁদাবাজি চলতে থাকলে শহীদ জিয়ার বিএনপি জনগণের সমর্থন হারাবে। রাজনীতিবিদদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে নতুন ধারার রাজনীতি শুরু হয়েছে ও হবে। আওয়ামী লীগের মতো যাদের খারাপ মতলব আছে তারা আর কখনো ক্ষমতায় যেতে পারবেনা। মনে রাখতে হবে, দেশে ভারতীয় চেতনা লালন করে ক্ষমতায় যাওয়ার দিন শেষ। আরো মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ এখন তরুণ প্রজন্মের হাতে। তাদের কারণেই আজ আপনারা মুক্ত বাতাসে ঘুরতে পারছেন। তাদের কারণেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে যেতে পারছেন। ৮১টি মামলা থেকে তারেক রহমান ৬৪টি মামলায় মুক্ত হতে পেরেছেন। ছাত্র-জনতার কারণেই তিনি এখন দেশে আসার স্বপ্ন দেখছেন। অথচ আপনারা সেই ছাত্র জনতাকে অবজ্ঞা এবং অবহেলা করছেন! গঠনমূলক সমালোচনার জন্য বিখ্যাত ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে আপনারা প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপির সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধেও বিএনপির অবস্থান লক্ষণীয়! তার সম্পাদনায় প্রকাশিত দৈনিক আমার দেশের বিরুদ্ধেও বিএনপি বিষোদাগার করছে! এছাড়া পিনাকী ভট্টাচার্য ও কনক সরোয়ারের মতো ইউটিউবারদেরকে বিএনপি শত্রু মনে করছে। দেশবাসী এটা কোনোভাবেই ভালো চোখে দেখছে না। বাংলাদেশের ছোট একটি দল হলো জামায়াতে ইসলামী। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাদের জনসমর্থন মাত্র সাত থেকে ১০%। এ দলটি এককভাবে আদৌ ক্ষমতায় যেতে পারবেনা। বিপরীতে বিএনপির জনসমর্থন প্রায় ৪০ পার্সেন্ট। খামাখা বিএনপি এই ছোট্ট দলটিকে শত্রু মনে করছে।
এটা সত্য যে, বিপ্লবোত্তর পাঁচ মাসে জামায়াতের সমর্থন বিপুলভাবে বেড়েছে। তাদের দলের প্রধান ডাক্তার শফিকুর রহমান ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের মানুষকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছেন। বলা যায়, গত ৫৪ বছর ধরে জামায়াতে ইসলামির যে সমর্থন ছিল না, বিগত পাঁচ মাসে তার চেয়ে বেশি সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের মাঝে নির্বাচনের তাড়াহুড়া নেই। দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নেই। তাদের ছাত্র সংগঠনের কর্মকাণ্ড বেশ সৃজনশীল হিসেবেই দৃশ্যমান হচ্ছে। ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক তাদের ভূমিকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে নন্দিত হচ্ছে। তবে জামায়াতের আমীরের কিছু কিছু বক্তব্য বিএনপিকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তাকে হিসেব নিকেশ করে কথা বলা উচিত বলে সংশ্লিষ্টজনেরা পরামর্শ দিচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপির উচিত, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনা। কারণ শহীদ জিয়ার হাতে গড়া বিএনপির সর্বনাশ করে চলেছে বিএনপির বর্তমান নেতারা। শহীদ জিয়ার প্রকৃত আদর্শিক সৈনিক ইশরাক হোসেন আর হুম্মাম কাদেররা দলে একেবারেই অপাঙ্ক্তেয়! মূলত খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং তারেক জিয়ার প্রবাস জীবনের সুযোগে বিএনপিকে ডুবিয়ে দিচ্ছে মির্জা ফখরুল গঙেরা। ভারত বিরোধী হিসেবে খ্যাত রুহুল কবির রিজভী ও শামসুজ্জামান দুদুও হাঁটছেন মির্জা ফখরুলের পথে। যেটা শহীদ জিয়ার নীতি আদর্শের সম্পূর্ণ বিরোধী। সার্বিক অবস্থা দৃষ্টে বলা যায়, আওয়ামী লীগের ছায়া এখন বিএনপির ঘাড়ের উপর সওয়ার হয়েছে! ভারতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ করছে বিএনপি।

লেখক: অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

Email: dr.knzaman@gmail.com