গাংনীর মৎস্য খ্যাত ষোলটাকা গ্রামেই ২২শ’পুকুর !
আক্তারুজ্জামান : ‘মাছে ভাতে বাঙালি’এই প্রবাদের সাথে পুরোটাই মিলে যাবে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষোলটাকা মৎস্য গ্রামের সাথে। মাছ চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন এই গ্রামের মানুষেরা। মাছ চাষ একদিকে, নিজেদের স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি মানুষের আমিষের চাহিদা মেটাচ্ছেন তারা। এ গ্রামের সকল মানুষের অন্য যে পেশায় থাকুক না কেন। মাছ চাষের সাথে সবাই যুক্ত রয়েছেন। যার কারণে প্রান্তিক পর্যায়ে বিভিন্ন ধান চাষের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকাংশে কমে গেছে।
সরেজমিনে ষোলটাকা মৎস্য গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এ গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই রয়েছে ছোট বড় পুকুর। বাড়ির উঠানােও করা হয়ে পুকুর খুঁড়ে মাছ চাষ।
এক সময়ের পরিত্যক্ত এসব পুকুরে চলছে বাণিজ্যিকভাবে মাছের চাষ। আর এ মাছ চাষ করেই আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছে প্রতিটি পরিবার।
ষােলটাকা গ্রামের তরুণ মাছ চাষি হিরােক মিয়া বলেন, বাপ-দাদাদের মুখে শােনা ব্রিটিশ আমলে আশপাশের গ্রামের থেকে বেশি খাজনা উঠেছিল এ গ্রাম থেকে। সে খাজনার পরিমাণ ছিলো ষোলটাকা। সেই থেকে এই গ্রামের নাম হয় ষোল টাকা গ্রাম।
তিনি আরো বলেন, এই ষোল টাকা গ্রামে অনেক খাল-বিল-পুকুর রয়েছে। আশপাশের গ্রামের পুকুরে পানি চৈত্র মাসে শুকিয়ে যায়। কিন্তু ষোল টাকা গ্রামের পানি বারাে মাসই থাকে। কখনও শুকায় না। যার কারণে এ গ্রামের শত ভাগ মানুষ পুকুরে মাছ চাষ করেন। অনেকে ধানি জমিতে পুকুর করে মাছের চাষ করছেন। এমনকি বাড়ির উঠানের একাংশ পুকুর খুঁড়ে অনেকেই মাছ চাষ করছেন। ষােলটাকা গ্রামেই ছােট-বড় ২২শ পুকুর রয়েছে।
আগে তিনি প্রবাসে ছিলেন। পরে প্রবাস থেকে ফিরে সবার দেখাদেখি মাছের চাষ শুরু করেন। মাছ চাষ করে এ গ্রামের সবাই স্বাবলম্বী।
স্থানীয় জােড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ও মাছ চাষি উজ্জ্বল হােসেন বলেন, এ গ্রামের সব বাড়িতে পুকুর রয়েছে। সেসব পুকুরে রুই, কাতলা, পাঙ্গাসসহ সব ধরনের সাদা মাছের চাষ করা হয়। এসব মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এসে নিয়ে যান।
মাছের খাবার তৈরির মিল মালিক সাহারুল ইসলাম বলেন, এ গ্রামে মাছের চাষ বেশি। আর সেই মাছের খাবারের চাহিদা মেটাতে এখানে ৪টি মৎস্য খাবার উৎপাদন মিল তৈরি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, এ অঞ্চলের মৎস্য গ্রাম হিসেবে পরিচিত ষোলটাকা, বানিয়পুকুরিয়া ও জুগিরগোফা গ্রাম। মাছ চাষ করেই এসব গ্রামের শত ভাগ মানুষ স্বাবলম্বী। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায় এখানকার মাছ।
আপনার মতামত লিখুন :