একটা বছর ধৈর্য ধরুন
ড. মোঃ কামরুজ্জামান
জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। দীর্ঘ ৩৬ দিনের আন্দোলনে দেশে প্রায় ২০০০ এর অধিক শাহাদাতের ঘটনা ঘটে। ৩০ হাজারের বেশি তরুণ পঙ্গুত্ব বরণ করে। শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাবার পর দেশ চালোনার দায়িত্ব পড়ে প্রফেসর ডক্টর ইউনুসের হাতে। ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস একজন ভদ্র প্রকৃতির মানুষ। দেশ চালানোর অভিজ্ঞতা তার নেই। তদুপরি তার চারপাশে যারা আছেন তাদের অধিকাংশই বিগত সরকারের নিয়োগকৃত আমলা। তারা পরোক্ষভাবে ইউনুস সরকারের বিরোধিতা করেই চলেছে। একদিকে পলাতাক আওয়ামী লীগ ইউনূসের পতন ঘটাতে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত সরকারসহ তার দেশের সকল মিডিয়া ইউনূসের বিরুদ্ধে এক অদৃশ্য যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। অন্যদিকে দেশে বিএনপির একটা অংশ প্রকাশ্যভাবে তার বিরোধিতা করছে। বিএনপির মতে, ইউনুস সরকার একটি ব্যর্থ সরকার। নয় মাসে ইউনুস দেশে কোনো উন্নতি করতে পারেনি। বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরাও ইউনুসের বিরুদ্ধে নানা ধরনের বিবৃতি এবং বক্তৃতা দিচ্ছেন। বিএনপি ইউনুস সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচন চাইছে। ড. ইউনুস চাইছেন ২০২৬ সালের জুনের ভিতর নির্বাচন সম্পন্ন করতে। কিন্তু বিএনপি’র দাবি ২৫ সালের ডিসেম্বরের ভিতরেই নির্বাচন দিতে হবে।
শুরুতে প্রফেসর ইউনুস সম্পর্কে দু-একটি বাক্য বলা দরকার। তিনি একজন বিশ্ববরেণ্য নেতা, সফল উদ্যোক্তা, নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ও মোটিভেশনাল স্পিকার। তাঁর স্পীচ শুনতে গেলে মিনিমাম ৭৫০০০ ডলার খরচ করতে হয় বলে নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে। ক্ষেত্র বিশেষে এই অংকটা লাখও ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশী টাকা হিসাব করলে এ এমাউনন্ট কোটি ছড়িয়ে যাবে। নেট ঘাটাঘাটি করে এমনি একটা হিসাব পাওয়া গিয়েছে। তবে যেটাই হোক অঙ্কটা খুব একটা কম না, অনেক বেশি।
এতো টাকা দিয়ে উনাকে নিশ্চয় কেউ নিরর্থক আহ্বান করেনা। একটা মানুষের নলেজ লেভেল কোন্ মানের হলে শুধুমাত্র বক্তৃতার জন্য মানুষ তার পেছনে এতো কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে সেটা বাঙালির বোঝার যোগ্যতা নাই।
আনন্দের বিষয় হলো এতো দামী কথাবার্তা বাংলাদেশের মানুষ ফ্রিতে শুনছে। আর সেজন্যই হয়তোবা বাঙালিরা সেটা নিতে পারছেনা, হজম করতে পারছে না! এছাড়া ঐতিহাসিক কারণ তো আছেই। বিখ্যাত ব্যক্তিরা স্বদেশে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে দুনিয়ার সব জায়গায়। ইউনুস স্যার তার ব্যতিক্রম নন।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার নয় মাস পূর্ণ করেছে। এ মেয়াদে সরকার নীতিগত কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ, কূটনৈতিক অগ্রগতি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। গত নয় মাসে এই সরকার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এই লক্ষ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন-এই ছয়টি ক্ষেত্রে সংস্কার আনার জন্য পৃথক পৃথক কমিশন গঠন করেছে। সবাইকে নিয়ে এ বিষয়ে ঐক্যমতের প্রচেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে সব দলের সাথে ইউনুসের বৈঠক হয়েছে। এসব সংস্কার বিষয়ে সবপক্ষ মোটামুটি ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করেছে।
সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত কমিশন ইতিমধ্যে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, যেখানে সংসদীয় ব্যবস্থা আরও কার্যকর করার জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সংস্কারের লক্ষ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে বিচারকদের নিয়োগ ও প্রেষণনীতিতে পরিবর্তন আনার সুপারিশ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যকারিতা বাড়াতে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার এই সংস্কারগুলোকে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের শাসন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও অন্তর্বর্তী সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়েছে ইউনুসের সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। বাজার তদারকি জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় কঠোরতা এবং মুদ্রানীতিতে কিছু কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
বিনিয়োগে আকর্ষণ বাড়াতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ কর ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে এই সরকার।
রপ্তানি খাত উজ্জীবিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পকে চাঙ্গা করতে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করা হয়েছে।
৮ আগস্ট সরকার গঠনের পর থেকে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সবচেয়ে কঠিন যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে, তা হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন। দায়িত্ব গ্রহণের সময় থেকেই সরকার দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কঠোর অবস্থান গ্রহণের ঘোষণা দেয়। সন্ত্রাস দমন, সীমান্ত অপরাধ, চোরাচালান এবং শহরাঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করার ওপর ছিল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম কঠোরভাবে দমন করেছে ইন্টারম সরকার। রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সীমান্ত এলাকাগুলোতে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। টেকনাফ ও কক্সবাজার অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
অনলাইন জালিয়াতি, হ্যাকিং এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম ইউনিট সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ভুয়া তথ্য প্রচার ও ডিজিটাল প্রতারণা বন্ধে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
ইউনূস সরকারের নয় মাসের অন্যতম বড় সাফল্য আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে এবং মানবাধিকার ইস্যুতে সরকার তার নীতি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যা ভবিষ্যতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার নতুন ধারা শুরু হয়েছে, যদিও এখনও কার্যকর সমাধান আসেনি।
বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে সরকার কৌশলী ভূমিকা রাখছে, যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন। তবে, বিরোধীদলগুলো বিশেষ করে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।
সরকার বলছে, সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করেই নির্বাচন আয়োজন করা হবে। বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানাচ্ছে, যা নিয়ে আলোচনা চলছে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া অব্যাহত আছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে স্থিতিশীল বাংলাদেশ গড়তে অবিরাম সাধনা করে যাচ্ছেন।
কিন্তু নিরেট ও নির্লোভ এই ভদ্রলোকের বিরুদ্ধে দেশের কিছু মানুষ সমালোচনার তীর নিক্ষেপ করেই চলেছে।
সুযোগ পেলেই ড. ইউনুসকে শূলে চড়াতে দ্বিধাবোধ করছেনা তারা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করছে এ মানুষগুলো। দেশি মিডিয়াগুলোর পাশাপাশি ভারতীয় মিডিয়তেও তাকে তুলোধোনা করছে কিছু নেতানেতৃ। পলাতক ফ্যাসিবাদীদের প্ররোচনায় দেশে অবস্থানরত কিছু ষড়যন্ত্রকারি এই কয়দিনে আড়াইশ’র অধিক আন্দোলন খাড়া করেছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো গ্রুপ তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে রাজধানীকে অচল করে দিচ্ছে। অথচ বিগত দেড় যুগেও তারা এসব দাবির কথা মুখে উচ্চারণ করেনি। আর হঠাৎ করেই সকল গ্রুপ এক যোগে মাঠে নেমে পরিকল্পিতভাবে ইউনুসকে বিপদে ফেলতে চাইছে। এ ষড়যন্ত্র চলমান রয়েছে এখনও। রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে যথাযথ সহযোগিতা করছে না।
হাসিনার ঋণে জর্জরিত দেশকে বদলে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ড. ইউনুস। ইতিমধ্যেই তিনি দেশী বিদেশী ঋণ পরিশোধ করেছেন প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা।
হাসিনা ও তার পরিবারের একাউন্ট থেকেই উদ্ধার করেছেন প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
দেশের বর্তমান রিজার্ভ ২৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে এই রিজার্ভ দেশের সর্ববৃহৎ অঙ্ক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
বিগত রমজানে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশংকাকে আশ্চর্যজনকভাবে হ্যান্ডেল করেছে ইন্টেরিম সরকার। এ সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল নিরবিচ্ছিন্ন।
দেশে ধর্ষণের শাস্তির বিধান থাকলেও সেটার দীর্ঘসূত্রিতা বিচার কার্যক্রমকে অকার্যকর করে ফেলেছিল। ইউনুস সরকার ধর্ষণের তদন্ত ১৫ দিন এবং বিচার ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী আমলে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির কারণে বাফুফের উপর ফিফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো। ইউনুস সরকারের উদ্যোগে বাফুফের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ফিফা।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে ৩২ বছর করা হয়েছে।
স্কুলের বইগুলোতে হাসিনার উল্টাপাল্টা সিলেবাস আর পারিবারিক তোষামোদির গল্প বাদ দিয়ে সাজানো গোছানো একটা সিলেবাস উপহার দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
ইউনূসের আহ্বানেই জাতিসংঘের মহাসচিব ৪ দিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। আন্তোনিও গুতেরেসের সফর ছিল বাংলাদেশের জন্য অনন্য মর্যাদার। তার এই সফর ইন্টারীম সরকারের ওয়ার্ল্ডওয়াইড রিকগনিশন বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সফরে এসে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, আগামী বছর মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে সেখানেই তাদের সাথে ইফতার করবেন ! এমন প্রস্তাবনা শুধু ইউনুসের কারণেই হয়েছে।
অনেক কিছুই ইউনুসের বিরুদ্ধে আমরা বলতে পারি। কারো বিরুদ্ধে বলা অনেক সহজ। আর অন্যকে গালাগালি করা তো বাঙালিজাতির আজন্ম স্বভাব ৷ নিজের প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে আওয়ামী স্টাইলে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়াটা আরো সহজ। কিন্তু হাসিনার রেখে যাওয়া ধ্বজভঙ্গ একটি দেশকে গঠন করা এতো সহজ না। দেশের তলানীতে থাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করাটাও এতটা সহজ নয়। বিগত ৫৪ বছরের শাসন তো দেশবাসী দেখেছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি শাসনের নামে আমাদেরকে শোষণই উপহার দিয়েছে । মূলত এরা সবাই ছিল, ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার ও মাফিয়াচক্রের শক্তিশালী গডফাদার। এদের সবাই ছিল গনতন্ত্রের ছদ্মাবরনী লুটেরা। ৫৪ বছর ধরেই এসব চক্র রাজনীতিকে অর্থ ইনকামের মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছিল। এই অনৈতিক লুটপাট আর পরিবারতন্ত্র থেকে তারা বেরিয়ে আসতে চায়না। রাজনৈতিক গুন্ডামি তাদের রক্তে মাংসে মিশে আছে। ইউনুসের কোনো ভালো কাজই তাদের চোখে পড়েনা।
ইউনুস স্যার সামগ্রিকভাবে ধ্বজভঙ্গ একটা জাতির মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অকৃতজ্ঞ, স্বার্থপর ও লোভী বাঙালি জাতি তাকে অসহযোগিতা করেই চলেছে। তাকে ব্যর্থ করতে চলছে দেশীয় মীর জাফরদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। আর ভারতের ১৩০ কোটি আধিপত্যবাদী সকল শক্তি দিয়েই একজন ইউনুসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত আছে সারাক্ষণ।
এমতাবস্থায় দেশ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন ড. ইউনুস। কিন্তু ইউনুস স্যার নিরব। তিনি কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেননি। তিনি নিরবেই বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন।
অনেকে তার কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে চাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে খেলতে চাইছেন। অথচ ডক্টর ইউনুস আন্তর্জাতিক মানের একজন নিরব খেলোয়াড়। বিশ্বে এমন উচু মানের খেলোয়াড় মানুষ অনেকটাই বিরল। তিনি গোটা বিশ্বের খেলোয়াড়দের খেলোয়াড়, নেতাদের নেতা। তাঁর কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে টিকে থাকা সহজ হবে না। হয়তো সেনাবাহিনী সেটা বুঝতে পেরেই ওয়াকার আর সেদিকে অগ্রসর হচ্ছেন না।
এমতাবস্থায় রাজনীতিবিদদের বেশি লাফালাফি বন্ধ করা উচিত! তাদের ভাবা উচিত সাধারণ জনগণ ইউনুসের পক্ষেই আছে। আপনারা যতই লাফাচ্ছেন মানুষ ততই আপনাদের প্রতি বিরক্ত হচ্ছে।
আপনারা যারা বেশি লাফালাফি করছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই: ইউনুস সরকারে থাকলেও দেশ চালাচ্ছেন আপনারাই। সরকারে আপনাদের প্রতিনিধিও রয়েছে। প্রশাসনে আপনাদের মনোনীত লোককেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র দলীয় শাসন বাকি আছে। কিছুদিন অপেক্ষা করলে সেটাও পেয়ে যাবেন। দীর্ঘ ১৭ বছরের সকল মামলা থেকে আপনারা মুক্তি পেয়েছেন। আপনাদের নেতারা কারামুক্ত হয়ে দেশে-বিদেশে সুচিকিৎসা নিতে পেরেছেন। ইচ্ছে মতো কথা বলতে পারছেন। দাবি দাওয়া উত্থাপন করতে পারছেন। সুতরাং ইউনুসের পাশে দাঁড়ান। ইউনুসকে সহযোগিতা করুন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুন্দর করতে তার পাশে দাঁড়ান। আর তো মাত্র একটি বছর। এ একটি বছরে দেশ এবং দলকে বিনা বাধায় ঢেলে সাজান। প্রায় দুই হাজার যুবক তরুণ প্রাণ দিয়েছে। এ সমস্ত তরুণের খুনিদের দু-একটা রায় হতে দিন। দু একটা বিচারের রায় জনগণকে দেখতে দিন। হাসিনা পালিয়ে গেছে তার পাচারকৃত অর্থগুলো ফেরত আনার সুযোগ দিন। বাংলাদেশ তো ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়ে গিয়েছিল। ভারতকে বাংলাদেশ স্বামিত্ব গ্রহণ করেছিল। দেশটি এখন ভারতের দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার পথে। আর অল্প কিছুদিন সময় দিন। দেশের মানুষ জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল। তাদের ম্যান্ডেটকে সম্মান করুন। ইউনুস কোনো ক্ষমতা লোভী লোক নন। তিনি বিদেশে টাকা পাচার করবেন না। তার সততা, তার মেধা এবং সময় কাজে লাগাতে দিন। মনে রাখা দরকার তিনি শুধু নির্বাচনের জন্যই দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। তিনি ধ্বজভঙ্গ এই দেশটির জন্য কিছু করার ইচ্ছা পোষণ করছেন। এগুলো জনগণকে একটু দেখতে দিন। আরেকটু ধৈর্য ধরুন! যদি ধৈর্য হারা হন তাহলে আম ছালা দুটোই হারাবেন।
আমাদের মনে থাকা উচিত,
খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ এবং প্রথম আলো পত্রিকা। আর জিয়া পরিবারকে সেইভ করতে বড় ভূমিকা রেখেছিল পিনাকি, ইলিয়াস ও কনক সরোয়ারের মত ইউটিউবরেরা। আর প্রথম আলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল আমার দেশ পত্রিকা এবং সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান। শুধুমাত্র খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এসব লোক আশ্চর্যজনকভাবে বিএনপির শত্রুতে পরিণত হয়েছে! আমার দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির মহাসচিবসহ অনেক সিনিয়র নেতা। আর আওয়ামী লীগ ও প্রথম আলোকে সেইভ করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিএনপির একটি বড় অংশ! সুতরাং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়!
লেখক: অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
আপনার মতামত লিখুন :