স্টাফ রিপাের্টার : তুষার হোসেনের চোখে ছিল স্বপ্ন। স্বপ্নটা খুব বড় কিছু ছিল না—শুধু একটা গরু কিনে বাড়ি ফেরা, পরিবারে একটু সুখ ফেরানো। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফকিরাবাদ গ্রামের মৃত মোশারফ হোসেনের ছেলে তুষার (২৮) প্রতিদিনের মতোই লড়াই করছেন জীবনের সঙ্গে। বাবা নেই, মা প্যারালাইজড হয়ে বিছানায়। সংসারের হাল ধরেছেন তিনি একাই। সিজিনাল তামাক কোম্পানির একজন সামান্য কর্মচারী হয়ে যে সামান্য আয় করেন, তা দিয়েই চলতে হয় তার পুরো সংসার।
গতকাল শুক্রবার তুষার রওনা হয়েছিলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী পশুর হাটে। সঙ্গে ছিল তার শেষ সম্বল, ৫০ হাজার টাকা। গরু কিনবেন, এবং গরু পালন করে মা-বোনের মুখে একটু হাসি ফুটাবেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, গরু কেনার আগেই তিনি হারালেন সব অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে।
বাসে করে গাংনী পৌঁছানোর আগেই তুষার অচেতন হয়ে পড়েন। সঙ্গে থাকা টাকা উধাও, স্বপ্ন তার চূর্ণ-বিচূর্ণ। কে তাকে এমন করল, কীভাবে করল সেসব প্রশ্নের উত্তর নেই কারো কাছে।
তবে অন্ধকারের মধ্যেও একটুখানি আলো হয়ে পাশে দাঁড়ালেন সাংবাদিক রাব্বি আহমেদ। নাগরিক টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের মেহেরপুর প্রতিনিধি রাব্বি নিজে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। গাংনী বাসস্ট্যান্ডে হঠাৎ চোখে পড়ে বাসে পড়ে থাকা এক অচেতন যুবক। তিনি প্রথমে ভেবেছিলাম কেউ অসুস্থ। কিন্তু পরে বুঝতে পারি, কিছু একটা ঘটেছে। পাশে কেউ ছিলােনা।।
স্থানীয়দের সহায়তায় সাংবাদিক রাব্বি আহমেদ তুষারকে নিয়ে যান গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে নিজের মতো করে যত্ন নিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। চার ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে তুষারের পরিচয় জানার চেষ্টা করেন। তুষারের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগে থাকা ১,০৩৫ টাকা নিজের কাছে রেখেছিলেন। খবর পেয়ে যখন তার পরিবার এসে পৌঁছায়, তখন ফোন ও
১,০৩৫ টাকা বুঝিয়ে দেন তুষারের পরিবারের হাতে।
এ বিষয়ে সাংবাদিক রাব্বি আহমেদ বলেন, এধরণের কাজ করে আমার গর্ববােধের কােন বিষয় নয়। এটি কেবল মানবিক দায়িত্ববোধ। অজ্ঞাত হলেও তিনি তো আমাদেরই কেউ। এই সমাজেরই একজন। মানুষ হিসেবে পাশে দাঁড়ানোই ছিল আমার কর্তব্য। এবং সেটি করেছি।
গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বানী ইসরাইল জানান, অজ্ঞান পার্টির এমন ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। আমরা ইতিমধ্যেই অসুস্থ্য ওই ব্যক্তির খােঁজখবর নেয়ার জন্য হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়েছি। দোষীদের চিহ্নিত করতে অভিযান চলছে।
আপনার মতামত লিখুন :